সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কেনার আগে যে বিষয়গুলো অবশ্যই চেক করে নিবেন

টিউন করেছেনঃ | প্রকাশিত হয়েছেঃ 11/13/2014 07:31:00 pm | টিউন বিভাগঃ
বাংলাদেশের বাজারে সেকেন্ড হ্যান্ড আইফোন কেনাটা বিরাট ঝুকিঁর ব্যাপার। একটু সাবধান না হলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আপনাকে অবধারিতভাবে ঠকতে হবে।  কারন আপনাকে কোন ধরনের ওয়ারেন্টি দেয়া হবে না, কোন মানি ব্যাক গ্যরান্টি পাবেন না। মানে কেনার সময় যা দেখার দেখে নিবেন, পরে আর কোন আপত্তি গ্রহন করবে না কেউ অবশ্য বসুন্ধরার দোকানগুলোতে নাকি ৬ মাসের সার্ভিস ওয়ারেন্টি দেয়। তাই ওরা দামও বেশী রাখে।
ঢাকাতে বেশ কয়েকটা সংঘবদ্ধ চক্র আছে যারা শুধুমাত্র আইফোন চুরি করে অন্যত্র বিক্রি করে দেয়। সুতরাং সাবধান না থাকলে দেখা যাবে, কোন না কোন ফিচার কাজ করছে না বা আইফোন ক্লাউডে লকড। সবকিছু ঠিক থাকলেও দেখা যাবে ফোন চোরাই মাল।  তখন মান সন্মান নিয়ে টানাটানি এমনকি কপালের ফেড়েঁ পড়ে জেলের ঘানিও টানতে হতে পারে। তাই  ইন্টারনেট থেকে ঘাটাঁঘাটি করে আমার নিজের বানানো একটা চেক লিষ্ট দিলাম। আমার জানা মতে বাংলাতে, বিশেষ করে আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এই রকম লিষ্ট এর আগে কেউ দেয় নাই। অন্তত আমি গুগলে অনেক ঘেটেওঁ পাই নাই।
এই লিস্ট পুরোপুরিভাবে ফলো করতে পারলে ঠকার সম্ভবান নাই বল্লেই চলে।  শুধু একটা সেফটিপিন আর ইন্টারনেট একটিভ আছে এমন একটি মাইক্রো সিম সাথে করে নিয়ে যাবেন। এই দুইটা জিনিস আইফোন চেক করতে কাজে লাগবে। আইফোনের সাথে যদি বিক্রেতা ইয়ারফোন অফার না করে তবে একটা ইয়ারফোনও সাথে নিন।
Check  List for buying 2nd hand iPhone by Proloy Hasan:
লাষ্ট আপডেটঃ  23.07.2014
কিনতে যাবার আগে যে মডেলের আইফোন কিনতে চান সেটার ফিচার এবং স্পেসিফিকেশনের ব্যাপারে খানিকটা ধারনা নিয়ে তারপর যান। আর বিক্রেতাকে প্রথমেই জিগেস করবেন তার সিমে নেট একটিভ আছে কিনা। না থাকলে আপনার সিম ভেতরে ভরে কাজ শুরু করেন।
১) iCloud Accoucnt Delete: আইফোন হাতে নিয়েই আগে দেখবেন যে আইক্লাউডে লকড কিনা। ঠিকানা: [settings > iCloud > কোন একটা ইমেইল ঠিকানা যদি এখানে দেখেন তাহলে বুঝতে হবে সেট লকড। সুতরাং আইফোন বুঝে নেবার আগে অবশ্যই বিক্রেতাকে বলবেন আপনার সামনে এই একাউন্টটা ডিলিট করে দিতে। সবার নীচে ডিলিটের অপশন আছে। যদি এটা বলতে ভুলে যান বা বিক্রেতা কোন কারনে ডিলিট না করেই আপনাকে ফোন গছিয়ে দেয় তাহলে বুঝবেন এই ফোনের কারনে অনেক ভোগান্তি অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।]
২. Erase all content & Settings: কেনার আগে এটা করতে পারলে তো সব চাইতে ভালো হয়। ঠিকানা: Settings > General > একদম সবার নীচে Reset > Erase all content & Settings.
৩. Find My iPhone is off: উপরের যে কোনর একটা করতে পারলে এটা অটোমেটিক অফ হয়ে যাবে। আলাদা করে আর অফ করতে হবে না। এই এ্যাপ দিয়ে ফোন ট্র্যাকিং করা হয়। সুতরাং চোরাই মাল হলে আর এটা অন থাকলে আপনি মহাবিপদে পড়তে পারেন।
৪. HDD Capasity: কেনার আগে আইফোনের স্টোরেজ চেক করে নিবেন যে যত গিগা বিক্রেতা বলছে তত গিগা আছে কিনা। দেখা যাবে Settings > General > About ঠিকানায় গিয়ে।
৫. Exterior including Screws + Gavey SIM tray + Turbo Unlock: আইফোনের বাইরের আবরন বা খাপটা ভালো করে দেখবেন যে বড় ধরনের কোন স্ক্রাচ বা দাগ আছে কিনা। বিশেষ করে স্ক্রু গুলো চেক করে দেখবেন যে খোলা হয়েছে কিনা। খোলা হলে স্কুর মাথায় দাগ থাকবে। আর সিম ট্রে বের করে ভালো করে দেখবেন যে ট্রের উপরে কোন ছোট সার্কিট লাগানো আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে বুঝবেন এটা গেভে আনলক করা। ফ্যাক্টরি আনলক নয়। গেভে আনলক করা আইফোনের দাম কম। কারন আপনার সিমের অনেক নাম্বার গেভেতে কাজ করবে না, যেমন: মোবাইলের ব্যালান্স চেক করতে পারবেন না, সবচে বড় সমস্যা হলো, একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবেন ফোন আবার ফ্যাক্টরি লকড হয়ে গেছে। এই সমস্যা বেশী হয় ফোনের ওএস আপডেট দেবার পর। টারবো আনলকেও এই সমস্যা হয়। অবশ্য বিক্রেতা সাধারনত আগেই বলে দিবে আপনাকে যে ফোনটা টারবো বা গেভে আনলক কিনা।
গ্যাভে বা টারবো আনলক বা R-sim আনলক ইত্যাদি দুই নম্বরি আনলক পদ্ধতি সমন্ধে বিস্তারিত জানতে গুগলিং করে দেখুন।
৬. iTunes Log on with my id:  নিজের যদি এ্যাপেল আইডি থাকে, তবে বিক্রেতার সামনে সেটা দিয়ে লগ ইন করবেন। দরকার হলে একটা এ্যাপ নামিয়েও দেখবেন। (Battery Doctor নামে একটা ফ্রি এ্যাপ আছে। ওটা নামাতে পারেন। ওটা দিয়ে আইফোনের ব্যাটারির ১৪ গোষ্ঠির খবর নেয়া যায়। আইফোন ফুল চার্জ হতে কত সময় নেবে এবং কত সময় ব্যাটারি ব্যাকাপ পাওয়া যাবে, সেটা এই এ্যাপের মাধ্যমে জানা যাবে।
৭. Data Syncing & charging at the same time: ভালো হয় সাথে করে একটা ল্যাপটপ নিয়ে যেতে পারলেও। তাহলে এই ফিচারটা চেক করে দেখা যায় যে আইফোনটি একইসাথে সিংক হচ্ছে আর চার্জ হচেছ কিনা। আর যদি একান্তই ল্যাপি না নিয়ে যেতে পারেন তো অন্তত পাওয়ার এডাপটার দিয়ে চার্জ করে দেখেন যে ফোন ঠিকমতো চার্জ হয় কিনা।
৮. Make a call: যে আইফোনটি কিনতে চাচ্ছেন সেখান থেকে ফোন করে কথা বলুন কারো সাথে। দেখুন মাইক্রোফোন আর সাউন্ড আউটপুট ঠিকমতো কাজ করে কিনা।
৯. Send a text: এসএমএস পাঠান।
১০. Headphone Jack: ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনে দেখুন ইয়ার ফোনের জ্যাক ঠিক আছে কিনা।
১১. Audio/Video: অডিও ভিডিও প্লেব্যাক চেক করুন।
১২. Still Picture/ Movie Recording: ক্যামেরা দিয়ে স্টিল ছবি তুলুন এবং ভিডিও করে দেখুন সব কাজ করে কিনা।
১৩. Voice Memo Recording: দেখুন আপনার ভয়েস রেকর্ড করা যায় কিনা। আইফোনে একটা বিল্ট ইন এ্যাপ থাকে এটার জন্য। নাম Voice Memo.
১৪.  ফোনের IMEI নাম্বার দিয়ে ফোনের বয়স চেক করুন। http://www.iphoneox.com  এই ওয়েব সাইটে যান। এরপর যে ফোন কিনতে চান সেটার IMEI নাম্বার দিয়ে দেখুন নীচের ছবিতে দেয়া তথ্য পাবেন।  প্রতিটি তথ্য খুব মনোযোগ দিয়ে পড়বেন এবং দেখবেন যে বিক্রেতার কথার সাথে সেগুলো মেলে কিনা। ফোনটি কবে কেনা হয়েছে একদম দিন তারিখসহ সব দেখতে পাবেন। IMEI নাম্বার পাওয়া যাবে Settings > General > About > নীচের দিকে IMEI নাম্বার আছে। সিম ট্রের সাথে IMEI নম্বর ম্যাচ করে কিনা চাইলে সেটাও চেক করে দেখতে পারেন। কারন আইফোন ৪ ও ৪ এসের সিম ট্রেতে আইএমইআই নাম্বার খোদাই করা থাকে। এর পরের সবগুলো মডেলে সেটের পেছনে পাবেন। ম্যাচ না করলে ভাববেন হয় চোরাই মাল নাহলে থার্ড পার্টি ফ্যাকটরি রিফারবিশড।
১৫: Charging with wall charger: ওয়াল চার্জার দিয়ে চার্জ হয় কিনা দেখুন। অনেক  আইফোন ল্যাপিতে চার্জ হয় কিন্তু ওয়াল আউটপুটে হয় না। তেমনি ভাইস ভার্সা।
 ‍
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, ব্যাটারির শেষবার চার্জ টাইম আর বর্তমান চার্জ পার্সেনটেজ এদুটো আনুপাতিক হারে মিলিয়ে দেখবেন সব ঠিক আছে কিনা। ধরুন, ব্যাটারি ইউজ হচ্ছে ৩০ মিনিট ধরে অথচ স্ট্যান্ডবাই টাইম দেখাচ্ছে ১ ঘন্টারও কম সময়, তাহলে বুঝবেন ব্যাটারির আয়ু খুব বেশীদিন নাই। ঠিকানাঃ Settings -> General -> Usage.
১৬. লেটেস্ট ওএস আপডেট দেয়া আছে কিনা সেটা চেক করুন। অনেক সময় চোরাই মাল হলে চোর লেটেষ্ট আপডেট দিতে ভয় পায়/দিতে পারে না।
১৭. স্ক্রিনের বাইরে আংগুল দিয়ে টাচ করে দেখুন যে ডিসপ্লে ডিম হয়ে যায় কিনা। IF dim – Okay. NOT dim – Not Okay.
১৮. ওয়াই ফাই-ব্লুটুথ: এই দুইটা ফিচার কাজ করে কিনা দেখবেন। আশে পাশে ওয়াই ফাই না থাকলেও সমস্যা নাই আপনি শুধু দেখেন যে এই দুটা অন হয় কিনা। কারন iOS 7 আপডেট দেবার পর হাজার হাজার আইফোনের ওয়াইফাই আর ব্লুটুথ ফিচার নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। এবং এই কারনেও অনেকে তার আইফোনটি বিক্রি করে দিতে পারে। আর বিক্রেতার জন্য সুখকর ব্যাপার হলো, বেশীরভাগ লোকই আইফোন কিনার আাগে এই দুইটা ফিচার চেক করে দেখে না। আপনি এই ভুল করবেন না।
১৯. আইফোনের দুটো জাত আছে। GSM আর CDMA. আামর কাছে CDMA preferred. আরেকটা জাত আছে, চাইনিজ আইফোন। মানে এটা শুধুমাত্র চায়নায় বিক্রির জন্য আলাদা ভাবে এ্যাপল বানিয়ে থাকে। এইটাও কিনবেন না।
২০. পাওয়ার বাটন ঠিক মতো কাজ করে কিনা দেখবেন। অনেক সময় অতিরিক্ত ব্যবহারে পাওয়ার বাটন ঢিলা হয়ে যায় বা রেসপন্স করতে দেরী হয়।
২১. আইফোনের পাশে যে বাটনগুলো আছে, সেগুলো ভালো করে চেক করে দেখবেন সব ঠিক ঠাক মতো কাজ করে কিনা। বিশেষ করে সাইলেন্ট বাটনটা।
২২. আইফোনের ডেড পিক্সেলও চেক করতে পারেন হাতে সময় থাকলেঃ http://iphonedpt.awardspace.com/ এই সাইটে যাবেন আইফোন দিয়ে তারপর চেক করে দেখবেন স্ত্রিনে কোন কালো ডট দেখায় কিনা। এইটা অত জরুরী কিছু না।  কেননা অত্যন্ত রেয়ার কেসে আইফোন ডেড বা স্টাক (stuck) পিক্সেল থাকে।
আরেকটা কথা, আমি সব সময়ই জেলব্রোকেন ফোন কিনতে নিরুৎসাহিত করি। জেলব্রোকেনের অনেক সমস্যা সেটা নিয়ে আরেকদিন আলাদা করে টিউন দিবো।
কিভাবে বুঝবেন আইফোন জেইলব্রোকেন কিনাঃ
২১. আইফোনে সার্চ করে দেখুন  "cydia", "Absinthe", "winterboard" or "installous" নামে কোন এ্যাপ ইনসটল করা আছে কিনা। যদি থাকে তবে ভাববেন আইফোনটি জেলব্রেক করা। কিনবেন না। বা কিনতে চাইলেও দাম কম বলবেন।
সবশেষে কয়েকটা সাধারন টিপসঃ ক্যাশ টাকা নিয়ে যাবেন না।  ব্যাংকে টাকা রেখে এটিএম কার্ড নিয়ে যান। সাথে করে কাউকে নিয়ে যান। একা না যাওয়াই ভালো। ফোনের ছবি বিজ্ঞাপনে না দিলে সেটা সন্দেহজনক। বিক্রেতা বেশী তাড়াহুড়ো করলে ভাববেন কোথাও কোন ঘাপলা আছে। আপনি সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে দেখবেন। দরকার হলে আপনি আগে থেকে বলে নিবেন যে আমার আধা ঘন্টা সময় লাগবে আইফোন চেক করতে। বিক্রেতা যদি এতে রাজী না হয় তবে সিটিএন বলে চলে আসুন। বিক্রয়.কম বা এখানেই.কম এ আইফোন হট কেকের মতো বিক্রি হয় এবং অবাক করা বাপার, বেশীরভাগই থাকে উত্তরার। এটা কেন কে জানে?
কেনার পর বিক্রেতার কাছ থেকে অবশ্যই তার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিবেন। আপনার কাছে সে আইফোন বিক্রি করেছে সেটাও সেখানে উল্লেখ থাকবে ও তার স্বাক্ষর থাকবে তারিখসহ। ভোটার আইডি কার্ড তার কিনা সেটা যথাসম্ভব যাচাই করে নিন। কৌশলে তার বাবা-মার নাম আর জন্মতারিখ জিগেস করে জেনে নিন এবং আইডি কাডের সাথে তা মিলিয়ে নিন। আইডির ছবির সাথে তার চেহারার মিল আছে কিনা দেখুন। কেননা, বিক্রেতা চোর হলে অন্য কারো ভোটার আইডি গছিয়ে দেয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। সবচাইতে ভালো হয়, তার বাসাটা চিনে রাখতে পারলে। তাই প্রথমেই চেষ্টা করবেন তার বাসায় গিয়ে ফোন দেখার।
কিছু মিস গেলে টিউমেন্টে জানাবেন প্লিজ। আমার  এই টিপসগুলো পড়ে কেউ যদি উপকার পান বা কারো যদি কোন ফিডব্যাক থাকে তবে জানাতে দ্বিধা করবেন না, খুব খুশী হবো। ধন্যবাদ।

ConversionConversion EmoticonEmoticon

:)
:(
=(
^_^
:D
=D
=)D
|o|
@@,
;)
:-bd
:-d
:p
:ng
:lv
Designed by HelpZoon Design

Powered by Helpzoon